"আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না"
পর্ব নংঃ ৪.
আমার কথাটা শুনে মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি আবার বলে উঠলাম, কি হলো আমার উঠতে হবে?
মেয়েটা আর কিছু না বলেই চেয়ারটা টান দিয়ে এনে আমার কাছে এসে বসলো। পেকেট থেকে এক পিছ রুটি নিয়ে দুধে ভিজিয়ে আমার হাতটা ওর মুখের সামনে এগিয়ে দিলাম। মেয়েটা রুটি টুকু মুখে না নিয়ে আমার দিকে কেমন করে যেনো একটা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইলো।
.
আমি বলে উঠলাম, কি হলো খাও?
মেয়েটা এইবারো কিছু না বলে সেই একই ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
আমি আবার বলে উঠলাম, আমার হাতে খেতে ঘিন করতেছে তাই না?
কথাটা শুনে মেয়েটা যেই কিছু একটা বলতে যাবে ঠিক তখনি আমি বলে উঠলাম, হা করো?
.
মেয়েটা আর কিছু না বলে রুটি টুকু খেয়ে নিলো। আবার বাকিটুকু রুটি ভিজিয়ে মেয়েটার সামনে দিতে দিতে বল্লাম, আবার নতুন করে আরেকটা রোগ বাধিয়ে আনলে কি? আজকের মতো সেই শাসনটা কি দেখতে পাবো।
"কি বল্লেন এইটা আবার বলেনতো?
আমি কিছুটা ভয় পেয়ে যেয়ে বলে উঠলাম, নাহ! কিছুনা।হা করো!
মেয়েটা বাকি রুটি টুক খেয়ে চেয়ার থেকে উঠে যেয়ে বল্লো, আর রোগ বাধাতে হবেনা! একটু উনিশ থেকে বিন্নিশ দেখলেই চলে।
কথাটা বলেই মেয়েটা বাহিরে চলে গেলো। কি থেকে কি হয়ে গেলো এটা! তাহলে কি ও আগের থেকেই আমাকে....! ভাবতেই যেনো শরীরটা শিরশিরয়ে উঠলো।
.
কিছুক্ষন পরেই আংকেল ডাক্তারকে সঙ্গে
করে নিয়ে এসে আমাকে চ্যাকাপ করালো।
ডাক্তার চেকাপ করার পর বল্লো, উনাকে
এখন নিয়ে যেতে পারেন। আর ভাজা-পুরা
জিনিসটা একদম না খেলেই উনার জন্য
ভালো হবে। আমি কয়েকটা ওষুধ লিখে
দিচ্ছি সাপ্তাখানিক খাওয়াবেন। আর
গ্যাস্ট্রিক এর ওষুধটা নিয়মিত চালিয়ে
যেতে হবে।
.
প্রায় ঘন্টাখানিক পর বাসায় এসে পড়লাম।
মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম স্যার তিন
বারের মতো ফোন করেছে। বাসার থেকেও
বেশ কয়েকবার ফোন আসছে। তাই সবার আগে
স্যারকে ফোন দিয়ে সব কিছু খুলে বল্লাম।
স্যার কিছু বল্লো না। শুধু বল্লো দুই-তিন দিন
রেষ্ট নেও। তারপর কাজে নযর দিও।আমি দুই-
তিনদিন এদিকটা দেখতেছি।
.
স্যার এর সাথে কথা বলেই মাকে ফোন
দিলাম। মাকে ফোন দিয়ে বল্লাম,
মোবাইলটা অফিসে রেখে এসেছিলাম
বিদায় ফোন ধরতে পারি নাই। আর তাছাড়া
মা আমার অসুস্থতার কথা জানলেও খুব টেনশন
করবে। যা আমি মোটেও চাই না।
.
লিমাও বেশ কয়েকবার ফোন করেছিলো।
আমি আর ওকে ফোন দিলাম না। জানি এখন
এই মেয়েটাকে ফোন দিলে কোহারার
আলাপ করা শুরু করে দিবে। যেই জিনিসটা ওর
কাছ থেকে মোটেও আশা করি না।
.
দুপুরবেলা জানালা দিয়ে আন্টি ডাক দিয়ে
জিজ্ঞাস করলো, আমি গোসল করছি নাকি।
আমিও বল্লাম হুম করছি। তখনি নাদিয়া এসে
আন্টির পাশে দাড়ালো। আন্টি আমাকে
বল্লো, রান্না এখনি হয়ে যাবে তুমি ঘরে
এসে টিভি দেখতে থাকো। এই বলেই আন্টি
চলে গেলো। কিন্তু নাদিয়া আমার দিকে না
তাকিয়ে জানালার সামনেই দাঁড়িয়ে
ছিলো।
আমি ওকে বলে উঠলাম, সারা রাততো ঘুমাও
নাই, এখন একটু ঘুমাও।
"খাওয়া দাওয়া করে তারপর।
আমি ইশারা দিয়ে বল্লাম, তোমার হাতে
কিন্তু খাওয়িয়ে দিতে হবে আমাকে।
.
মেয়েটা ভ্রু কুচিয়ে বল্লো,ইশ! শখ কতো।
"ভ্রু কুচালা কেন? দাড়াও আসতেছি।
"এই শুনেন। গ্যাস্ট্রিকের ওষুধটা খেয়ে
আসেন।
"আপনি করে বল্লা কেন?
"তাহলে কি করে বলবো?
"তুমি!
"আমি আপনার মতো এতো ফার্স্টনা।
"তাই নাহ! আচ্ছা ঠিক আছে। না বল্লে আমিও
খেতে আসুম না।
.
কথাটা বলেই আমি বিছানাতে হেলান দিয়ে
বসে রইলাম। ভাবছিলাম পাঁচ মিনিট পর
এমনিতেই ওদের বাসায় চলে যাবো। মিনিট
দুইয়েক যাওয়ারপর মোবাইলে একটা
অপরিচিত গ্রামীণ নাম্বার থেকে মেসেজ
আসলো। মেসেজটাতে লেখা ছিলো, এমনটা
কেন করলেন? হুম! এই রকম বদমেজাজগিরি
দেখালে কিন্তু বেশি ভালো হবেনা!
তাড়াতাড়ি বাসায় আসো।
.
মেসেজটা কার সেটা আর বুঝতে বাকি
রইলোনা। বিছানা থেকে উঠে জানালা
দিয়ে তাকাতেই দেখলাম, মেয়েটা এখনো
দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই চোখ দিয়ে
ইশারা করলো যেনো আমি চলে আসি।
.
তারপর আমার রুম থেকে বের হয়ে ওদের
বাসায় চলে গেলাম।
.
ওদের বাসায় যাওয়ার পর নাবিলকে নিয়ে
টিভি দেখতেছিলাম। মেয়েটা বার বার রুমে
এসে ফুচকি মেরে চলে যাচ্ছিলো। রান্না
শেষ হওয়ার পর আন্টি আমাকে ডাক দিয়ে
নিয়ে যেয়ে আমাকে খাওয়ালো। আসলেই
মনে হচ্ছিলো না যে, আমি এখানে মাকে
ছাড়া থাকি।
.
খাওয়া দাওয়া করে কিছুক্ষন পর আমার রুমে
চলে আসলাম। যেই ওষুধ গুলো খাওয়ার জন্য
হাতের কাছে নিলাম। ঠিক তখনি নাদিয়ার
মেসেজ আসলো, ওষুধ খাইছো?
.
জানতাম মেয়েটা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে
আছে। তাই ওষুধগুলো হাতে নিয়ে জানালার
কাছে যেয়ে ওকে দেখালাম।তারপর মেয়েটা
মুচকি একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো।
.
এইভাবেই আস্তে আস্তে করে একের পর এক
দিনগুলো কাটতে লাগলো। মাঝে মধ্যে রাতে
ফোনে কথা হতো। কিন্তু বেশির ভাগ সময়
মেসেজেই চ্যাটিং করতাম।
.
এখন প্রতিদিনই বাসায় যেয়ে খেয়ে আসতে
হয়। দুপুর হলেই ফোন দেওয়া শুরু করে
মেয়েটা। আর বলতো, ওই কখন আসবা, কইটা
বাজে খেয়াল আছে, আমি কিন্তু এখনো খাই
নি তাড়াতাড়ি আসো একেক দিন একেক রকম
কথা বলে ফোন করে আমাকে বাসায় নিয়ে
আসতো। কিন্তু একদিনো আমার সামনে
আসতো না। আমিও কিছু বলতাম না। থাক
না!....... আড়ালে চোখাচোখির মাঝেও তো এক
আলাদা ধরনের অনুভূতি লুকিয়ে আছে।
.
আজ দুপুরে কালেকশনের টাকাগুলো মিলাতে
যেয়ে খুব সময় লাগছিলো। প্রায় দুইটার মতো
বেজে গেছিলো। তখনি নাদিয়া ফোন দিয়
ফোন দিলো।
ফোনটা ধরেই বল্লাম, কি করতেছো?
"কয়টা বাজে?
"এইতো দুইটা।
"খেতে হবে না! কই তুমি?
"এইতো অফিসে। কালেকশনের টাকাগুলো
মিলাচ্ছি। মাস শেষ হয়ে যাচ্ছেতো স্যার
কখন এসে হিসাব চেয়ে বসে তাই একটু দেরি
হবে।
"আমি এতো কিছু জিজ্ঞাস করছি?
"নাহ!
"এখন বাসায় আধা ঘন্টার জন্য এসে খেয়ে
যাও।
"আজকে না আসলে হয় না?
"রাখি,বাই!
"ওই শোনো।
"আবার কি?
"আসতেছি দাড়াও।
"এইতো ভাল ছেলে। এখন রাখলাম।
এই বলেই মেয়েটা ফোনটা কেটে দিলো।
.
চলবে ................................................
No comments:
Post a Comment
Thank You for your Structural Comment||